বিধবা_মেয়ের_প্রেম💯😍

 


ঔষধ গুলো কাছের ফার্মেসিতে পাওয়া না যাওয়ায় একটু দূরে চলে আসছি। ঔষধ গুলো প্যাক করা শেষ এখন হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবো। হঠাৎই মোবাইলের চিরচেনা রিংটোন টা বেজে উঠলো

একটা অপরিচিত নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করলাম


আসসালামু আলাইকুম।

একটা মেয়েলী কন্ঠে ভেসে আসলো


ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনি কোথায়? ডাক্তার এসে ঔষধ খুঁজছে।

বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা গজদন্তিনী।

এই তো ঔষধ প্যাক করা শেষ। এখন যাচ্ছি।

একটু তাড়াতাড়ি আসবেন প্লিজ।

আমি এখনি আসছি। এটা কি আপনার নাম্বার?

হ্যাঁ – বলেই ফোনটা কেটে দিলো।


আসতে আসতে নাম্বারটা গজদন্তিনী দিয়ে সেইভ করে রাখলাম।

আজাদ সাহেবের জ্ঞান ফিরলো একটু আগেই। আমি গজদন্তিনী আর তাসমিন ওনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

এখন আপনার কেমন অনুভূতি হচ্ছে?


আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম,

একটু ভালো।

কি নিয়ে এতো চিন্তা করতে গেছলা তুমি? আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো তবে আমাদের কি হতো সেটা একবার ভেবে দেখেছ?


ছলছল চোখ নিয়ে গজদন্তিনী আজাদ সাহেবের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটি ছুড়ে দিলো।

আমার কি অন্য কোনো চিন্তা আছে মা। আমার তো সব চিন্তা তোদের নিয়ে – কাঁপা কাঁপা গলায় আজাদ সাহেব উত্তর দিলো।

ওনাদের এসব দেখে আমার কেমন যেনো বিরক্তি শুরু হলো। একজন অসুস্থ মানুষের সাথে অবান্তর কথা বলছে।

কি শুরু করছেন আপনি? ওনাকে একটু বিশ্রাম নিতে দিবেন তো। এসব বাসায় গিয়ে আলোচনা করবেন।

আমায় রিলিজ দিবে কখন?


আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি।

আমায় ডাক্তারের কাছে যাওয়া শুনে তাসমিন ও আমার সাথে আসতে চাইলো। কিন্তু গজদন্তিনী ওকে ওখানে রেখে আমার সাথে আসলো।


ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। উনি আজকেই নিয়ে যেতে বললো, তবে একটু রেষ্টে থাকতে হবে।

ডাক্তারের কেবিন থেকে বের হয়ে গজদন্তিনী হনহন করে হাটতে শুরু করলো।

এই যে শুনছেন? – আমার ডাকে পিছনে ফিরে তাকালো।

কিছু বলবেন?


সেই সকালে আসছেন। চলেন কিছু খেয়ে নিবেন।

আমার ক্ষুধা নেই। আর বাবা তাসমিন ওরাও তো না খেয়ে আছে।


তাই জন্য তো বলছি। চলেন কিছু খেয়ে নিবেন আর ওনাদের জন্য পার্সেল করে নেওয়া যাবে।

আমি যাবে না। আপনি তাসমিন কে সাথে নিতে পারেন।

বিশ্বাস করতে পারেন কোনো অবান্তর কথা বলবো না। কোন সিচুয়েশনে কোন কথা বলতে হয় আর কিছু না হোক সেটা অন্তত জানা আছে আমার।


অনিচ্ছা সত্ত্বেও কি ভেবে আমার সাথে আসতে রাজি হলো।

সকালে গল্পের ধারায় তাসমিন একবার বলেছিলো গজদন্তিনীর বিরিয়ানি খুব পছন্দ। তাই ওকে নিয়ে একটা বিরিয়ানি হাউজে আসলাম।


ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হয়ে সিটে বসলাম।

আপনি বিরিয়ানি খাবেন নাকি কাচ্চি।

আমি কিছু খাবো না। আপনি এতো করে বললেন জন্য আসলাম। ওদের জন্য প্যাক করে নিন তাহলেই হবে।


গজদন্তিনীর কথা শুনে মুচকি হেঁসে ওয়েটার কে দুই প্লেট বিরিয়ানি অর্ডার করলাম। রাগ আমার উপর আছে কিন্তু বিরিয়ানির উপর রাগ করে থাকতে পারবে না।

আপনাকে একটা কথা বলি?


যদি গতকালের বিষয়ে হয় তবে না বলাই ভালো হবে।

আরে না। ঐটা না। আপনার বাবা কে এক সপ্তাহ অফিসে যেতে দিবেন না। ওনার পুরোপুরি সুস্থ হওয়া দরকার। আর ওনার একটু খেয়াল রাখবেন।

হুম।

এর মাঝেই বিরিয়ানি চলে আসলো। আমার ভাবনাটাই ঠিক। বিরিয়ানির উপর রাগ করে থাকা কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

খাওয়া শেষ করে ওনাদের জন্য পার্সেল নিলাম।


হসপিটালে এসে দেখি তাসমিন বসে গেমস খেলছে। পরিবারের ছোট মেয়েরা সবসময় একটু বেখেয়ালি স্বভাবের হয়।

ডাক্তার সাথে কথা বলতে এতক্ষণ লাগলো বুঝি? – হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো, ওর মাঝে কোনো সিরিয়াসনেস না দেখে গজদন্তিনী চোখ রাঙিয়ে ওকে সাবধান করে দিলো।


এখন রাত প্রায় আটটা। আজাদ সাহেব কে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। ওনাকে ওনার বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমি চলে আসলাম।

আসার সময় দরজা লক করার জন্য গজদন্তিনী নিজেই আসলো – আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ? সেটা কেন?

সারাদিন আমাদের সাথে থাকার জন্য।


একটা সুযোগ দিলে সারা জীবন থাকতে রাজি।

গজদন্তিনীর থেকে প্রতিত্তোরে কিছু আশা করছিলাম। কিন্তু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে দরজা লক করে দিলো।

রাতের আকাশ, নিস্তব্ধ শহর, এমন একটা পরিবেশ একা একা হাটার জন্য সব থেকে উত্তম।

রবী ঠাকুরের মল্লিকা বনে গানটা গুনগুন করছি আর হাঁটছি।


হঠাৎ ফোনের বিরক্তিকর টোন বেজে উঠে আমার সুন্দর মুহূর্ত উদযাপনে বাঁধা দিলো।

তাসমিন ফোন দিছে

হ্যাঁ বলো তাসমিন।


তুমি বাসায় গেছো ভাইয়া?

বাব্বাহ, আমার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে দেখি।

আপু জানতে চাইলো তাই ( গজদন্তিনী হয়তো পাশেই ছিলো তাই তার নাম বলায় তাসমিন কে বকে চলে গেলো)

ওহহ আচ্ছা। বাসার কাছেই আছি তবে এখনো বাসায় যাই নি।


হুম। আচ্ছা সাবধানে যেও। আমি রাখলাম।

আচ্ছা।

সারাদিনের ক্লান্তি রাতের বেলায় পুরোপুরি অনুভব করা যায়। বিছানায় শরীর মেলিয়ে দিতেই গভীর ঘুমের আবেশে জড়িয়ে গেলাম। সারা রাত কোন দিকে গেলো বুঝতে পারলাম না।


সময়টা ঠিক আন্দাজ করতে পারছি না। ফোনটা এমন করে বাজছে মনে হচ্ছে দুধের শিশু সকাল বেলা মায়ের কাছে খাবার বায়না ধরেছে।

ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা খুঁজে রিসিভ করলাম।

হ্যালো।


ভাইয়া তুমি এখনো ওঠো নি? অফিসে যাবা না?

কয়টা বাজে?

এই তো আট টা।

তাসমিনের কথায় বিছানা থেকে উঠে বসলাম।


এতটা বেলা হয়ে গেছে?

হ্যাঁ।

তুমি এতো সকালে ফোন দিলে যে নাকি এখনো তোমার আপু ফোন দিতে বলছে?

আসলে অনেক টা তাই। বাবা অফিস যেতে চাচ্ছে। তুমি প্লিজ বাবাকে একটু বলো।

আচ্ছা। ফোনটা ওনাকে দাও।


আজাদ সাহেবের সাথে কথা বলে ওনাকে বাসায় থাকতে বললাম।

নয়টার আগেই অফিসে যেতে হবে নয়তো বস আমার বেহাল অবস্থা করবে।

তারাহুরো করে বের হলাম। নাস্তা করারও সময় নেই।


এখন প্রায় বারোটা বাজে। কাল থেকে কিছু খাওয়া হয় না। পেটে তো ক্ষুধায় ইঁদুর দৌড়ে বেড়াচ্ছে। কাজেও মন বসছে না। টিফিন সময় আসতে এখনো প্রায় এক ঘন্টা বাকি।


ফোনটা হাতে নিয়ে গ্যালারি ফোনবুকে ঘোরাঘুরি করছি। যদি এতে সময়টা তাড়াতাড়ি কেটে যায়।

হঠাৎই চোখে গজদন্তিনী নামটা পড়লো।

ফোন দিবো কি?


কিন্তু ফোন দিয়ে কি বলবো?

সেটা পরে দেখা যাবে আগে ফোন তো দেই।

আসসালামু আলাইকুম


ওয়ালাইকুম আসসালাম। কিছু বলবেন?

আপনি আমার নাম্বার সেইভ করে রাখছিলেন?

না। তবে মনে রেখেছিলাম। কারণ আমি জানতাম আবার আমার কাছে ফোন আসবেই।

বাহ আপনি তো ভবিষ্যৎ বলতে পারেন দেখছি।


আপনার যদি দরকারী কোনো কথা থাকে তবে বলতে পারেন। নয়তো আমি ফোন কাটবো।

কি যেন বলতে ফোন দিলাম ভুলে গেছি।

অযথা ফোন দিবেন না। এটা আমার পছন্দ না। যত্তসব। – বলে মুখের ওপর ফোন কেটে দিলো।

এমন কেউ হয়? একটু সুখ দুঃখের কথা বলে সময়টা কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু…

আর একবার ফোন দিবো?


যদি রেগে যায়?

আচ্ছা একটু রাগলে কি আর এমন হবে।

একবার রিং বেজে কেটে গেলো রিসিভ করলো না।


আবার দিবো কিন্তু সেই সময় গজদন্তিনী নিজেই ফোন দিছে।

এখন তো ভয়ে আমার হাতে কাঁপুনি শুরু হলো।


পর্ব ৩


কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম

আপনার সমস্যা কি? বার বার ফোন দিচ্ছেন কেন?

গজদন্তিনী যে এতটা রেগে যাবে কল্পনাও করতে পারি নি। আমি তো শুধু দুই বার ফোন দিলাম। – আমতা করে বললাম।


আপনি প্রয়োজন ছাড়া কেন ফোন দিবেন?

আমি তো প্রয়োজনেই ফোন দিয়েছি।

ওহ আচ্ছা। কি প্রয়োজন?


বাচার জন্য তো বললাম প্রয়োজন। এখন কি বলবো? কি প্রয়োজন?

ওহ হ্যাঁ মনে পড়ছে

বলছিলাম আজাদ সাহেব এখন কেমন আছেন?


আজাদ সাহেবের কথা বলায় গলাটা শান্ত হয়ে গেলো – কিছুটা সুস্থ।

ওহ। ঔষধ গুলো ঠিক মতো দিচ্ছেন তো?

হ্যাঁ। আর কিছু বলবেন?

আপাতত তো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। পেলে ফোন দিবো।


গজদন্তিনীকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই কেটে দিলাম। যদিও বা ওর রাগ আমার মন ছুয়ে যায় কিন্তু এবার ওর রাগের পরিমাণ বাড়তে পারে তাই ফোন কেটে দেওয়া।


একটা মেয়ে তার বাবাকে যে পরিমাণ ভালোবাসে এবং যে পরিমাণ তার কষ্ট বুঝতে পারে যদি সেই পরিমাণ তার স্বামীকে বোঝার চেষ্টা করতো তবে পৃথিবীটা সুখের সমুদ্রে ভেসে থাকতো। কিন্তু এদের চোখে বাবা আর ভাই ছাড়া সব পুরুষ খারাপ।


অফিস শেষে সন্ধ্যার পর গজদন্তিনীর বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিচ্ছি। হঠাৎই গজদন্তিনী চোখে পড়লো।

এই অবেলায় আপনি একা এখানে কেন? – পিছনে থেকে হঠাৎ করে কথা বলায় চমকে গেছে।

বাবার জন্য ফল কিনতে আসছিলাম।


এর জন্য আপনাকে এই সময় বাইরে আসতে হবে?

তো কে আসবে?

আমায় বললেই তো হতো। আর আমি ফল নিয়েছি। চলেন আপনাকে ফল নিতে হবে না।

কিন্তু


আবার কিন্তু কিসের? আকাশের অবস্থাও ভালো না। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে চলেন।

গজদন্তিনীর চোখে একটু ভয় দেখলাম। ও কি আমায় ভয় পাচ্ছে? তাহলে তো ভালোই ভয় পেলে ওকে কেমন বাচ্চাদের মতো লাগে। হিহি।


নিয়ন আলোয় হাটছি। ইশশ যদি হাতটা ধরতে পারতাম।

হঠাৎই বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। কোনো রকম কাক ভেজা হয়ে একটা ছাউনির নিচে আশ্রয় নিলাম। আগে থেকেই ওখানে দুই জন ছিলো।


বাসার কাছে এসেই বৃষ্টি নামতে হলো।

বৃষ্টি তো আর দেখতে পাচ্ছে না যে কে বাসার কাছে আর কে দূরে।

গজদন্তিনী আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না কি জন্য কথা না বলে চুপ হয়ে গেলো।


জানার জন্য আমিও পিছনে ফিরে তাকালাম। যে দুজন আগে থেকেই ছিলো তারা প্রেমিকযুগল। ছেলেটা মেয়েটাকে গভীর আবেশে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে।

হঠাৎই ছেলেটার সাথে আমার চোখাচোখি হতেই ছেলেটা বললো, – ভাইয়া আপুরও বোধ হয় শীত করছে। আপনি আমার মতো করে ধরুন। আপনার এবং আপুর দুজনেরই শীত হাওয়া হয়ে যাবে।


আমি মুচকি হেঁসে বললাম – মন তো চায় ধরতে কিন্তু সেই কপাল তো উপরওয়ালা দেয় নি ভাইয়া। আপনি ধরে থাকুন

গজদন্তিনী রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। কি জন্য রেগে গেলো কিছুই তো বুঝতে পারলাম না।


বৃষ্টি মোটামুটি থেমে গেলো। গজদন্তিনী আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলো।

গজদন্তিনী এই গজদন্তিনী – আমার ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো।

কি বললেন আপনি?


একটু ধীরে হাঁটুন। আমি তো আপনার নাগালে পাচ্ছি না।

আপনি ওখানে কি বললেন?

কই কিছু না তো। যা বলার তা তো ঐ ছেলেটাই বললো,

আপনি কিছু বলেন নি?


উঁহু।

মন তো চায়। কিন্তু কপাল খারাপ এটা কে বললো, ?

ওহহ। তাহলে আপনার রাগের কারণ এইটা? আমি তো আপনাকে বলি নি। অন্য কাউকে বলছি।

তাহলে ঠিক আছে। আর আপনি আমার পিছনে আসছেন কেন?


আপনার বাবাকে দেখতে।

ওহ।

যাক বাবা এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম।


একটু পরেই বাসায় এসে পৌঁছে গেলাম। আমায় দেখে তাসমিন তো খুশিতে আটখানা।

একি ভাইয়া তুমি তো পুরো ভিজে গেছো। তুমি দাঁড়াও আমি তোমার কাপড় চেঞ্জ এর ব্যাবস্থা করছি।

মেয়েটা খুবই চনচল। এক মুহুর্ত কোথাও স্থীর থাকে না।


একটু পর একটা শার্ট আর একটা লুঙ্গি নিয়ে হাজির হলো।

এগুলো কোথায় পেলে তুমি?

বাবার।


কিন্তু আমি তো লুঙ্গি পড়তে পারি না।

এত বড় হয়েছো লুঙ্গি পড়তে পারো না। আসো আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।

পাশেই গজদন্তিনী ছিলো। তার দিকে তাকাতেই দেখি চোখ রাঙ্গিয়ে আছে।


থাক আপু লাগবে না। আমি তো এখনি চলে যাবো। তোমার বাবাকে ডেকে দাও।

তুমি বাবার রুমে যাও।

আচ্ছা।


আমি আজাদ সাহেবের রুমের দিকে পা বাড়ালাম। হঠাৎ উনি নিজেই দেখি বের হলো।

আপনি অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে আসলেন কেন?


তোমার কন্ঠ শুনে বের হলাম। তুমি তো ভিজে গেছো। কাপড় টা বদলে নাও।

দরকার হবে না। আমি এখনি চলে যাবো।

বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে।

আবার বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো?


হুম। এবার অনেক জোরেই বৃষ্টি নামছে। তুমি বাসায় যেতে পারবে না ভাইয়া। আজ তোমায় এখানেই থাকতে হবে।

মজা করিও না। বৃষ্টি কমলেই আমি চলে যাবো।

আজ না হয় থেকেই যাও।

আমি থাকলে হয়তো কারো অসুবিধে হবে।


আমার কথা শুনে মুখ ভেঙচিয়ে গজদন্তিনী রুমে চলে গেলো।

সেদিন আর আসা হলো না। রাতে সেখানেই থাকতে হলো। খাওয়ার পর ড্রয়িং রুমে বসে আছি তাসমিন একটা বই দিয়ে গেলো – ভাইয়া এই বইটা পড়। খুব ভালো লাগবে।

তাই কি বই?


বরফ গলা নদী, জহির রায়হানের।

ভাবলাম বৃষ্টির দিনে নদীর গল্প পড়তে ভালোই লাগবে। আগে কখনো এসব উপন্যাস পড়া হয় নি।

তখন থেকে পড়া শুরু করলাম। যতই পড়ছি ততই গল্পের ভিতরে চলে যাচ্ছি। সময়ের দিকে কোনো খেয়াল নেই।

আপনি এখনো এখানে কেন? – গজদন্তিনীর হঠাৎ কথা বলায় চমকে উঠলাম।


ওহহ ভয় পাইয়ে দিলেন তো। এখন যদি আমার অসুখ বাধে তো কে সেবা করবে শুনি?

আমার কথা উপেক্ষা করে আবার বললো, – এখনো এখানে কি করছেন? রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ুন।

তাসমিন একটা বই দিলো তো সেটাই পড়ছি। অনেক মজাদার।


ওহহ। আচ্ছা। পড়া শেষ হয়ে গেলে লাইট বন্ধ করে দিবেন।

আপনি কি এখনি ঘুমাবেন?

না কেন?


তাহলে বসুন না গল্প করি।

গজদন্তিনী এসে আমার পাশে বসলো। আমি কখনো ভাবি নি যে গজদন্তিনী আমার কথায় আমার সাথে গল্প করার জন্য বসবে।

আপনি বৃষ্টি পছন্দ করেন?


নাহ।

পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের তো বৃষ্টি পছন্দ। আপনার না কেন?

মনে করুন ঐ কম ভাগ মানুষের দলে আমি।

কিন্তু পছন্দ না করার কারণ টা জানতে পারি?


এমনিতেই। তবে বাজ( বাজ কথাটা উচ্চারণ করার সাথে সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বিরাট গর্জন করে একটা বাজ পড়লো। সাথে সাথেই গজদন্তিনী আমায় জড়িয়ে ধরলো। এতক্ষণে বুঝলাম বৃষ্টি কেন পছন্দ নয়। )

এভাবেই যদি জড়িয়ে থাকে দিবস রজনী

তবে পৃথিবী হোক বাজ রাজ্য।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url